মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজাঃ ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আরবি তিনটি শব্দের সম্মিলিত রূপ। ঈদ, মিলাদ ও নবী—এই তিনটি শব্দ নিয়ে এটি গঠিত।
আভিধানিক অর্থে ঈদ অর্থ খুশি, মিলাদ অর্থ জন্ম, নবী অর্থ বার্তাবাহক। পারিভাষিক অর্থে মহানবী (সা.)-এর দুনিয়ায় আবির্ভাবের আনন্দকে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) বলা হয়। যদিও ঈদ একটি ধর্মীয় পরিভাষা, যার প্রয়োগক্ষেত্র বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা নির্ধারিত। আর তা হচ্ছে, বছরে দুটি দিবস তথা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। তন্মধ্যে একটি ঈদও কোনো নবী-রাসুলের ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন—‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় পৌঁছে দেখতে পেলেন, সেখানকার অধিবাসীরা নায়মুক ও মেহেরজান নামে দুটি দিন খেলাধুলা ও আনন্দ-উৎসব করে থাকে। রাসুল (সা.) তাদের জিজ্ঞেস করেন, এই দুটি দিন কিসের? তারা বলল, জাহেলি যুগে আমরা এই দুই দিন খেলাধুলা ও উৎসব করতাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদের এই দুই দিনের পরিবর্তে অন্য দুইটি উত্তম দিন দান করেছেন এবং তা হলো—ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১১৩৪)
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জন্ম বার বা জন্মের দিন ছিল সোমবার।
তিনি এদিন রোজা রাখার মাধ্যমে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতেন। তাই সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে আজ অবধি সব আকাবির ও আশেকে রাসুল এদিন রোজা রাখার চেষ্টা করেন।
বাংলাদেশসহ কয়েকটি মুসলিম দেশে ১২ রবিউল আউয়াল সরকারিভাবে ছুটি পালিত হয়।
মিসরে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় ছুটির ঘোষণা রয়েছে। কুয়েতে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে তিন দিন ছুটির ঘোষণা করা হয়। (সূত্র : নুজুমু মিসরিয়্যাহ ও এনএমআইএসআর ডটকম) ভারতের কিছু কিছু জায়গায় মিলাদুন্নবী উপলক্ষে মিলাদ মাহফিল, সিরাত মাহফিল ও শোভাযাত্রার আয়োজনা করা হয়। দিনটিতে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। (সূত্র : ইন্ডিয়া গভ. ইন.) পাকিস্তানের একটি সম্প্রদায় দিনটি বেশ ঘটা করে পালন করে। এদিন তারা মসজিদ ও বাড়িঘরে আলোকসজ্জা করে, নিউ ইয়ারের মতো একের পর এক আতশবাজিতে রঙিন হয়ে যায় এখানকার আকাশ। বিভিন্ন এলাকার অলিগলি আলোকিত ও মুখরিত হয় মশাল মিছিলে। এদিন পাকিস্তানজুড়ে সরকারি ছুটি ঘোষণা দেওয়া হয়। (সূত্র : পাকিস্তানের সরকারি ওয়েবসাইট)
আফগানিস্তানের কিছু মুসলমান এ দিনটি আলোকসজ্জা, আতশবাজি, শোভাযাত্রা ও মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে পালন করে। দেশটিতে এদিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। ইয়েমেনেও ১২ রবিউল আউয়াল উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। (সূত্র : dawnnews)
ফিলিস্তিনের ওয়েবসাইটগুলো থেকে জানা যায়, ১২ রবিউল আউয়াল সেখানে সরকারিভাবে ছুটি পালিত হয়। এ ছাড়া ইরাক, আলজেরিয়া, মরক্কো, সিরিয়া, লিবিয়া, জর্ডান, তিউনিসিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১২ রবিউল আউয়াল সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়।